প্রশ্ন: সাধারণ জাবেদা কী?
উত্তর: লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি লেনদেন ডেবিট–ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ নির্দিষ্ট ছকে তারিখের ক্রমানুযায়ী লিখে রাখাকেই সাধারণ জাবেদা বলে।
প্রশ্ন: বিশেষ জাবেদা কী?
উত্তর: পণ্য ব্যবসায়ে লিপ্ত প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত বা বারবার যেসব বিশেষ ধরনের লেনদেন, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, নগদ প্রদান, নগদপ্রাপ্তি, ক্রয় ফেরত, বিক্রয় ফেরত ইত্যাদি সংঘটিত হয়, সেগুলো বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে যে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে বিশেষ জাবেদা বলে।
প্রশ্ন: নগদপ্রাপ্তি জাবেদা কী?
উত্তর: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট নগদ আন্তপ্রবাহ জানার উদ্দেশ্যে সব নগদ ও নগদ সমতুল্য প্রাপ্তির লেনদেন নিয়ে যে জাবেদা প্রস্তুত করা হয়, তাকে নগদপ্রাপ্তি জাবেদা বলে।
প্রশ্ন: নগদ প্রদান জাবেদা কী?
উত্তর: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট নগদ বহিঃপ্রবাহ জানার উদ্দেশ্যে সব নগদ ও নগদ সমতুল্য প্রদানের লেনদেন লিপিবদ্ধ করার জন্য যে জাবেদা প্রস্তুত করা হয়, তাকে নগদ প্রদান জাবেদা বলে।
প্রশ্ন: প্রকৃত জাবেদা কী?
উত্তর: যেসব লেনদেন কোনো বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা যায় না, ওই সব লেনদেন লিপিবদ্ধ করার জন্য যে জাবেদা ব্যবহার করা হয়, তাকে প্রকৃত জাবেদা বলে। কোন ধরনের লেনদেন প্রকৃত জাবেদায় লিপিবদ্ধ হবে, তা নির্ভর করে বিশেষ জাবেদার শ্রেণিবিভাগের ওপর।
প্রশ্ন: প্রারম্ভিক দাখিলা কী?
উত্তর: ব্যবসায়ের প্রারম্ভে আনীত সম্পত্তি এবং বিগত বছরের যাবতীয় সম্পত্তি ও দায়দেনাগুলোকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রারম্ভিক দাখিলার মাধ্যমে জাবেদাভুক্ত করা হয়। প্রারম্ভিক দাখিলায় সব সম্পত্তি ডেবিট এবং দায় ও মূলধন হিসাবকে ক্রেডিট ধরা হয়।
প্রশ্ন: প্রদত্ত বাট্টা কী?
উত্তর: দেনাদারের কাছ থেকে পাওনা টাকা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করার জন্য যে পরিমাণ টাকা ছাড় দেওয়া হয়, তাকে প্রদত্ত বাট্টা বলে।
প্রশ্ন: প্রাপ্ত বাট্টা কী?
উত্তর: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনেক সময় ধারে পণ্য ক্রয় করে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রদেয় টাকা পরিশোধের সময় পাওনাদারের কাছ থেকে যে ছাড় বা বাট্টা পাওয়া যায়, তাকে প্রাপ্ত বাট্টা বলে।
প্রশ্ন: মাঠপর্যায়ের বই কী?
উত্তর: যে স্থানে লেনদেন সংঘটিত হয়, সেখানে জাবেদা লেখা হয় বলে একে মাঠপর্যায়ের বই বলা হয়।
প্রশ্ন: জাবেদাকরণ বা জাবেদাভুক্তিকরণ কী?
উত্তর: লেনদেনকে জাবেদায় নিয়মানুযায়ী লিপিবদ্ধ করার কাজকে জাবেদাভুক্তিকরণ বলে।
প্রশ্ন: মূল্য সংযোজন কর বা মূসক কী?
উত্তর: বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, উৎপাদক তার কাঁচামাল বা ক্রীত পণ্যের মূল্যের সঙ্গে নতুন বা উন্নততর পণ্য বিক্রয় করার পূর্বে যে ‘ব্যয়’ বা ‘মূল্য’ যুক্ত করে থাকে, তাকে ‘মূল্য সংযোজন কর’ বলে।
প্রশ্ন: জাবেদায়ন কী?
উত্তর: ব্যবসায়ের দৈনন্দিন লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর উক্ত লেনদেনগুলোকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বর্ণিত নীতি অনুযায়ী হিসাবের প্রাথমিক বই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে জাবেদায়ন বলে।
প্রশ্ন: জার্নাল ভাউচার কী?
উত্তর: আধুনিক হিসাব ব্যবস্থায় প্রতিটি জাবেদা আলাদা আলাদা লেখা হয়, যাকে বলে জার্নাল ভাউচার।
প্রশ্ন: সমন্বিত রেওয়ামিল কী?
উত্তর: সমন্বয় দাখিলা হতে সংশ্লিষ্ট হিসাবসমূহকে স্ব স্ব হিসাব খাতে স্থানান্তর করে পুনরায় হিসাব খাতসমূহের সমন্বিত ও সংশোধিত জের নির্ণয় করা হয়। সমন্বিত জেরসমূহ নিয়ে পুনরায় যে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়, তাকে সমন্বিত রেওয়ামিল বলে।
প্রশ্ন: যাচাই কী?
উত্তর: হিসাবসমূহকে দুতরফা দাখিলায় লিপিবদ্ধ করলে এদের জের নিয়ে রেওয়ামিল তৈরি করে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
প্রশ্ন: হিসাবকাল কী?
উত্তর: হিসাবকাল অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়। সাধারণত ১ বছর সময়কে হিসাবকাল ধরা হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে এক মাস বা ছয় মাসেরও হিসাবকাল হতে পারে।
প্রশ্ন: ব্যক্তিবাচক হিসাব কী?
উত্তর: ব্যক্তিবাচক হিসাবের ডেবিট ব্যালেন্স (উদ্বৃত্ত) অথবা ক্রেডিট ব্যালেন্স (উদ্বৃত্ত) উভয়ই হতে পারে। ব্যক্তিবাচক হিসাবের ডেবিট ব্যালেন্স দ্বারা দেনাদার বোঝায় এবং ক্রেডিট ব্যালেন্স দ্বারা পাওনাদার বোঝায়। অর্থাৎ ডেবিট ব্যালেন্স দ্বারা দেনাদারের নিকট থেকে কারবারের পাওনা টাকা বা সম্পত্তি বোঝায় এবং ক্রেডিট ব্যালেন্স দ্বারা পাওনাদারের নিকট কারবারের দায় বোঝায়।
প্রশ্ন: প্রথম দলিল কী?
উত্তর: প্রামাণ্য দলিল প্রস্তুত বা সংগ্রহ করে লেনদেন চিহ্নিত করা হয়। এসব প্রামাণ্য দলিলকে ব্যবসায়ের লেনদেনের প্রথম দলিল বলা হয়। এসব দলিলে সংশ্লিষ্ট লেনদেনের যাবতীয় তথ্যাদি থাকে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর নাম অনুযায়ী দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করা থাকে।
প্রশ্ন: হিসাবের প্রাথমিক বই কী?
উত্তর: লেনদেনসমূহ চিহ্নিতকরণের পর দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী ডেবিট ও ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে একটি নির্দিষ্ট ছকে জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এটাই হলো হিসাবের প্রাথমিক বই।
প্রশ্ন: হিসাব সমীকরণের কাঠামোগত পরিবর্তন কী?
উত্তর: হিসাব সমীকরণের উপাদানগুলোর মধ্যে একদিকে সম্পদসমূহ থাকে এবং অন্যদিকে দায় ও মালিকানা স্বত্ব থাকে। কোনো লেনদেনের ফলে যখন হিসাব সমীকরণের শুধু সম্পদের দিক অথবা দায় ও মালিকানা স্বত্বের দিকের মধ্যে যেকোনো একদিকের উপাদানগুলোর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে এবং উভয় পাশের মোট পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে, তখন তাকে হিসাব সমীকরণের কাঠামোগত পরিবর্তন বলে।
প্রশ্ন: দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি কী?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য লেনদেনে এক পক্ষের নিকট হতে যে সুবিধা পায় এবং অপর পক্ষকে সমান মূল্যের সুবিধা প্রদান করে বলে স্বীকার করা হয়, তাকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ হিসাবব্যবস্থা।
প্রশ্ন: হিসাব চক্র কী?
উত্তর: প্রতিষ্ঠানের লেনদেন চিহ্নিতকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ হতে শুরু করে আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রদানসংক্রান্ত হিসাববিজ্ঞানের এই প্রক্রিয়া প্রতিটি হিসাবকালে পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন ধাপে চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে। হিসাববিজ্ঞানের এ চক্রাকার প্রক্রিয়া, পর্যায় বা ধারাবাহিক আবর্তন মেনে চলাকেই হিসাব চক্র বলে।
প্রশ্ন: নগদ কী?
উত্তর: একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রতিষ্ঠানের নিকট যে পরিমাণ দেশি বা বিদেশি তৈরি মুদ্রা জমা হয় তাকে নগদ বলে।
প্রশ্ন: বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি কী?
উত্তর: বিজ্ঞান বলতে কোনো যুক্তির আলোকে বর্ণিত জ্ঞানকে বুঝায়। আর এ জ্ঞান যখন বাস্তবজীবনে সর্বজনগ্রাহ্য করার নিমিত্তে নিয়ম, বিধি বা সূত্র প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি বলে।
প্রশ্ন: দ্বৈতসত্তা কী?
উত্তর: ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ইটালির ধর্মযাজক ও গণিত শাস্ত্রবিদ লুকা ডি প্যাসিওলি হিসাব রক্ষণের বিজ্ঞান ভিত্তিক দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির ওপর প্রথম বই প্রকাশ করেন। আধুনিক হিসাবরক্ষণের নীতি অনুযায়ী, প্রতিটি লেনদেনে দুটি পক্ষ বা হিসাব খাত বিদ্যমান থাকে। এদের এক পক্ষকে গ্রহীতা বা Debit এবং অন্য পক্ষকে দাতা বা Credit বলা হয়। লেনদেনের এ প্রকৃতিকে দ্বৈতসত্তা বলা হয়।
প্রশ্ন: জাবেদা কী?
উত্তর: লেনদেন সংঘটিত হওয়া মাত্র তারিখ অনুসারে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে যে প্রাথমিক বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলে।
প্রশ্ন: মৌলিক হিসাবের বই কী?
উত্তর: লেনদেনগুলোকে মৌলিক আকারে, অর্থাৎ লেনদেন যে অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে, ঠিক সেই অবস্থাতে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। এ কারণে জাবেদাকে মৌলিক হিসাবের বই বলা হয়।
প্রশ্ন: হিসাবের প্রাথমিক বই কী?
উত্তর: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারিখের ক্রমানুসারে ডেবিট ও ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে সর্বপ্রথম যে হিসাব বইসমূহে লিপিবদ্ধ করা হয়, সেই বইসমূহকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলে।
প্রশ্ন: বাট্টা কী?
উত্তর: চুক্তি অনুসারে বা প্রচলিত নিয়ম অনুসারে পণ্যের স্বাভাবিক মূল্য অথবা প্রাপ্য বা দেয় টাকার পরিমাণ হতে যে অংশ বাদ দেওয়া হয়, তাকে বাট্টা বলে।
প্রশ্ন: খতিয়ান কী?
উত্তর: হিসাবের প্রাথমিক বই জাবেদা হতে সংক্ষিপ্ত আকারে ও শ্রেণিবদ্ধ অবস্থায় পৃথক পৃথক শিরোনামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সকল লেনদেনসমূহ হিসাবের যে পাকা বইতে শ্রেণিবিন্যাস করে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং যাতে ব্যবসায়ের চূড়ান্ত ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় সম্ভব, তাকে খতিয়ান বলে।
প্রশ্ন: নামিক হিসাব কী?
উত্তর: ব্যবসায়ের সমস্ত ব্যয়, খরচ বা ক্ষতিসংক্রান্ত হিসাব ডেবিট এবং আয় বা লাভসংক্রান্ত হিসাব ক্রেডিট হবে।
প্রশ্ন: আধুনিক পদ্ধতি বা হিসাব সমীকরণভিত্তিক পদ্ধতি কী?
উত্তর: আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীরা হিসাব সমীকরণের সাহায্যে ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম প্রচলন করেন, যাকে আধুনিক পদ্ধতি বা হিসাব সমীকরণ ভিত্তিক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের হিসাব সমীকরণ নিচে দেওয়া হলো:
হিসাব সমীকরণটি হলো: A = L+ OE /P
প্রশ্ন: ডেটর কী?
উত্তর: যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ধারে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদান করা হয়, তাদের ‘দেনাদার’ বলে। ব্রিটিশ পরিভাষায় একে Debtors লেখা হয়, তবে আমেরিকান পরিভাষায় একে Accounts Receivable (প্রাপ্য হিসাব) লেখা হয়।
প্রশ্ন: ক্রেডিটর কী?
উত্তর: যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ধারে পণ্য ক্রয় বা সেবা সংগ্রহ করা হয়, তাদের ‘পাওনাদার’ বলে। ব্রিটিশ পরিভাষায় একে Creditors লেখা হয়, কিন্তু আমেরিকান পরিভাষায় একে Accounts Payable (প্রদেয় হিসাব) লেখা হয়।
প্রশ্ন: মৌলিক হিসাব সমীকরণ কী?
উত্তর: সত্তানীতি অনুসারে সম্পত্তিকে ডেবিট এবং দায় বা মূলধনকে ক্রেডিট করা হয়, অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের পরিমাণ মালিকানাস্বত্ব ও বহির্দায়ের সমান হবে। যে সমীকরণের মাধ্যমে এই সমতা প্রকাশ করা হয় তাকে হিসাববিজ্ঞানে ‘মৌলিক হিসাব সমীকরণ’ বলে। সমীকরণটির মূল কথা হলো একটি প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ওই সব সম্পত্তির ওপর বিভিন্ন পক্ষের দাবি বা মোট স্বত্বাধিকারের সমান হবে।
প্রশ্ন: বিজ্ঞানসম্মত হিসাবপদ্ধতি কী?
উত্তর: দুতরফা দাখিলায় লেনদেনের বিজ্ঞানসম্মত হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে হিসাবকাল শেষে রেওয়ামিল প্রস্তুতের মাধ্যমে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয়। এ পদ্ধতিতে মোট ডেবিট পরিমাণ ও মোট ক্রেডিট পরিমাণ সব সময় সমান হয়। এ হিসাব ব্যবস্থায় হিসাবে ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি সংঘটিত হলে সহজেই তা উদ্ঘাটন করা যায়। এ কারণে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত হিসাব পদ্ধতি।
প্রশ্ন: হিসাব সমীকরণ কাকে বলে?
উত্তর: লেনদেনের দ্বৈতসত্তার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীরা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও দায়ের সমতা বিধানসংক্রান্ত যে গাণিতিক সূত্র উদ্ভাবন করেছেন, তাকে হিসাব সমীকরণ বলে। এই সমীকরণের মূল কথা হলো, প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ওই সম্পত্তির ওপর বিভিন্ন পক্ষের মোট দাবির সমান হবে।
প্রশ্ন: সমাপনী দাখিলা কী?
উত্তর: হিসাব বইয়ের নামিক হিসাবসমূহ বন্ধ করে সমন্বিত রেওয়ামিল তৈরি করার জন্য সমাপনী দাখিলা দেওয়া হয়। আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রণয়নের সময় নামিক বা আয়-ব্যয় বাচক হিসাবসমূহের জের বা উদ্বৃত্ত নির্দিষ্ট হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়। যেসব দাখিলার মাধ্যমে নামিক হিসাবসমূহ বন্ধ করা হয়, ওই সব দাখিলাকে সমাপনী দাখিলা বলে।
প্রশ্ন: আয় বিবরণী কী?
উত্তর: উৎপাদিত দ্রব্যের বিক্রয় হতে উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় খরচ বাদ দিয়ে মোট আয় হতে বিপণন খরচ, প্রশাসনিক খরচ ইত্যাদি বাদ দিয়ে নিট আয় বের করার জন্য যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয়, তাকে আয় বিবরণী বলা হয়।
প্রশ্ন: মালিকানা স্বত্ব বিবরণী কী?
উত্তর: কারবার প্রতিষ্ঠানের মালিক তার নিজস্ব স্বত্বার অংশ আলাদাভাবে জানতে আগ্রহী। মালিকানা স্বত্ব জানার জন্য যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয়, তাকে মালিকানা স্বত্ব বিবরণী বলা হয়।
প্রশ্ন: উদ্বৃত্তপত্র কী?
উত্তর: হিসাব সমীকরণের তিনটি উপাদান সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্ব যে ছকে প্রদর্শিত হয়, তাকে উদ্বৃত্তপত্র বলা হয়।
প্রশ্ন: নগদ প্রবাহ বিবরণী কী?
উত্তর: সহজ অর্থে নগদ প্রবাহ বিবরণী হলো নগদ অর্থের আগমন ও নির্গমনসংক্রান্ত তথ্যের বিবরণী। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিষ্ঠানের কোন কোন উৎস হতে কীভাবে নগদ অর্থের আগমন ঘটছে, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ওই নগদকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা যে বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে নগদ প্রবাহ বিবরণী বলা হয়।
প্রশ্ন: সম্পত্তি কী?
উত্তর: প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন উপাদানসমূহ, যার অর্থনৈতিক সুবিধা আছে এবং উপযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে, তাকে সম্পদ বলে। যেমন আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, ব্যাংকে জমা ও প্রাপ্য হিসাব ইত্যাদি। সম্পত্তি সাধারণত ডেবিট জের নির্দেশ করে। সম্পত্তি বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং হ্রাস পেলে ক্রেডিট করতে হবে।
প্রশ্ন: দায় কী?
উত্তর: ভবিষ্যতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে, এমন লেনদেনকে দায় বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যবসায়ের সম্পত্তির ওপর বাইরের ব্যক্তিদের দাবিকে দায় বলে। যেমন প্রদেয় হিসাব/পাওনাদার, প্রদেয় বিল, বকেয়া খরচ, অর্জিত আয় ইত্যাদি।
প্রশ্ন: মালিকানা স্বত্ব কী?
উত্তর: ব্যবসায়ের মালিকপক্ষের ব্যবসায়ের নিকট পাওনাকে মালিকানা স্বত্ব বলা হয়। ব্যবসায়ের মোট সম্পত্তি হতে বাহ্যিক দায়দেনা বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে মালিকের পাওনা বা মালিকানা স্বত্ব বলা হয়। মূলধন বিনিয়োগ, নিট আয়, মূলধনের সুদ ইত্যাদি দ্বারা মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পায়। অপর পক্ষে উত্তোলন ও নিট ক্ষতি দ্বারা মালিকানা স্বত্ব হ্রাস পায়।
প্রশ্ন: ব্যয় কী?
উত্তর: আয় অর্জন করতে গিয়ে পণ্য দ্রব্য ও সেবা বাবদ যা প্রদান করতে হয়, তাকে ব্যয় বলে। যেমন বেতন, মজুরি, প্রদত্ত ভাড়া ইত্যাদি। ব্যয় সাধারণত ডেবিট জের নির্দেশ করে। ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং হ্রাস পেলে ক্রেডিট করতে হবে।
প্রশ্ন: আয় কী?
উত্তর: পণ্য দ্রব্য বা সেবার বিনিময়ে যে অর্থের আগমন ঘটে, তাকে আয় বলে। যেমন- ব্যবসায়ের প্রধান আয় হলো বিক্রয় বা সেবার আয়। আয় সাধারণত ক্রেডিট জের নির্দেশ করে। আয় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট এবং হ্রাস পেলে ডেবিট করতে হবে।
প্রশ্ন: উত্তোলন কী?
উত্তর: মালিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো নগদ অর্থ, সম্পদ পণ্য বা সেবা গ্রহণ করাকে উত্তোলন বলে। যেমন নগদ উত্তোলন, পণ্য উত্তোলন, জীবন বিমার প্রিমিয়াম প্রদান ইত্যাদি।
প্রশ্ন: একতরফা দাখিলা পদ্ধতি কী?
উত্তর: যে হিসাব ব্যবস্থায় লেনদেনের কখনো একটি পক্ষ, কখনো দুটি আবার কখনো কোনো পক্ষই লিপিবদ্ধ হয় না, তাকে একতরফা দাখিলা পদ্ধতি বা অসম্পূর্ণ নথিব্যবস্থা বলে। এটি একটি অসম্পূর্ণ, অবাস্তব, অপরিপক্ব, দুরূহ ও জটিল ব্যবস্থা বলে মনে হয়। তৃতীয় কোনো পক্ষের নিকট এর বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা কম।
প্রশ্ন: ডেবিট কী?
উত্তর: হিসাবের সুবিধা গ্রহণকারী পক্ষকে ডেবিট বা গ্রহীতা বলে।
প্রশ্ন: ক্রেডিট কী?
উত্তর: হিসাবের সুবিধা প্রদানকারী পক্ষকে ক্রেডিট বা দাতা বলে।
১. নগদ অর্থের আগমন ও নির্গমন হচ্ছে নগদ প্রবাহ বিবরণী।
২. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত করা হয় ওঅঝ-৭ অনুযায়ী।
৩. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত করা হয় ৩টি খাতের অধীনে।
৪. নগদ প্রবাহ বিবরণীর খাতসমূহ নির্ধারিত হয়েছে ওঅঝ-৭ অনুযায়ী।
৫. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক ১ জানুয়ারি, ১৯৯৪।
৬. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত বাধ্যতামূলক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির।
৭. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত নিষ্প্রয়োজন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির।
৮. বিশদ আয় বিবরণীর বকেয়া ভিত্তিক দফা নগদ প্রবাহ বিবরণী।
৯. আর্থিক বিবরণীর চতুর্থ ধাপ হলো নগদ প্রবাহ বিবরণী।
১০. নগদ প্রবাহ বিবরণীর পূর্ব নাম ঋঁহফ ঋষড়ি ঝঃধঃবসবহঃ।
১১. ঋঅঝই অনুযায়ী নগদ প্রবাহ বিবরণীর উদ্দেশ্য ৪টি।
১২. তারল্যের অবস্থা মূল্যায়িত হয় নগদ প্রবাহ বিবরণীতে।
১৩. নগদ অর্থের জালিয়াতি প্রতিরোধ করে নগদ প্রবাহ বিবরণী।
১৪. নগদ প্রবাহ বিবরণীর অন্যতম উদ্দেশ্য নগদ প্রবাহের সামর্থ্য যাচাই।
১৫. নগদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার নগদ প্রবাহ বিবরণী।
১৬. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় নগদ প্রবাহ বিবরণীতে।
১৭. নিট নগদ প্রবাহ থেকে জানা যায় নগদ হ্রাস-বৃদ্ধি।
১৮. নগদ প্রবাহ বিবরণীর মাধ্যমে যাচাই হয় ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহ।
১৯. ওঅঝ-৭ অনুযায়ী নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান ৩টি কার্যাবলির অধীনে।
২০. প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নগদ প্রবাহ অন্তর্ভুক্ত পরিচালন কার্যাবলিতে।
২১. ওঅঝ-৭ মতে প্রধান রাজস্ব উৎপন্নকারী কার্যক্রম পরিচালন কার্যাবলি।
২২. ঋণ প্রদান এবং আদায়করণ অন্তর্ভুক্ত করা হয় বিনিয়োগ কার্যাবলিতে।
২৩. মূলধন কাঠামো পরিবর্তন সংক্রান্ত লেনদেন অন্তর্ভুক্ত অর্থায়ন কার্যাবলিতে।
২৪. ট্রেজারি স্টক ক্রয়-বিক্রয় দেখানো হয় অর্থায়ন কার্যাবলিতে।
২৫. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সর্বাপেক্ষা তারল্য সম্পদ নগদ অর্থ।
২৬. ‘হাতে নগদ’ ও ‘চাহিবামাত্র প্রদেয় আমানত’ হলো নগদ।
২৭. তিন মাস বা তার কম সময়ে রূপান্তরযোগ্য সম্পদ নগদ সমতুল্য।
২৮. অনগদ কার্যক্রমগুলো পৃথক নোট দেয়া হয় ঋঅঝই ৯৫ অনুযায়ী।
২৯. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুতে অবিবেচ্য অনগদি বিনিয়োগ ও অর্থায়ন।
৩০. অনগদ কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত হলো অবচয়।
৩১. ঋণপত্রকে শেয়ারে রূপান্তর অনগদি অর্থায়ন কার্যক্রম।
৩২. নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুতের দু’টি পদ্ধতিই ঋঅঝই কর্তৃক স্বীকৃত।
৩৩. নগদ প্রবাহ বিবরণী জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো পরোক্ষ পদ্ধতি।
৩৪. বকেয়াভিত্তিক হিসাবরক্ষণ নগদভিত্তিতে রূপান্তরিত হয় পরোক্ষ পদ্ধতিতে।
৩৫. স্থায়ী সম্পদ বিক্রয়জনিত লাভ-ক্ষতি জড়িত নিট আয়ের সাথে।
৩৬. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদ্ধতির মূল পার্থক্য পরিচালন সংক্রান্ত কার্যাবলি।