ব্যাংকের অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাভুক্ত সমন্বিত ৯ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (জেনারেল) পদে ২০৪৬ জন নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ১৮ মার্চ (সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা)। এ পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. রাসেল সরদার ও মো. মাসুদুর রহমান।  
লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

যেভাবে লিখিত পরীক্ষা হয়
লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস বা মানবণ্টন নেই। তবে বিগত বিভিন্ন পরীক্ষার আলোকে দেখা যায়, লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি ও গণিত থেকে ২০০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। বাংলায় সমসাময়িক বিষয়ের ওপর একটি রচনা লিখতে আসে। এতে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন অথবা ব্যাংক সম্পর্কিত দরখাস্ত লিখতে আসে, সেখানে নম্বর থাকে ২০। ইংরেজির ক্ষেত্রে ফোকাস রাইটিং বা রচনা লেখার জন্য ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। ফোকাস রাইটিংয়ের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে লেখার দক্ষতা থাকতে হয়। ইংরেজিতে একটি প্যাসেজ দেওয়া থাকে। সেই প্যাসেজের আলোকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এর জন্য ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। অন্যদিকে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের জন্য ২০ নম্বর। আবার ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। আর গণিতের জন্য আগে ৭০ থেকে ৮০ নম্বরের প্রশ্ন এলেও বর্তমানে ৩৫ থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে। এ ছাড়া টীকা লিখতে আসে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বরের ওপর।

প্রশ্ন পড়ে প্যাসেজের উত্তর
ইংরেজিতে একটি প্যাসেজ দেওয়া থাকে। সে আলোকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। এর জন্য ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এ ক্ষেত্রে প্যাসেজ পড়ার আগে প্রশ্নগুলো পড়তে পারলে ভালো হয়। তাহলে প্যাসেজ পড়ার সময় মাথায় সেট করা থাকবে কোন কোন তথ্য প্যাসেজ থেকে বের করতে হবে। তারপর প্যাসেজ পড়ে সে আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর করা যেতে পারে। প্যাসেজের প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে অনেকে হুবহু প্যাসেজ থেকে লেখা তুলে দেয়। এমনটা না করে প্যাসেজ থেকে তথ্য নিয়ে নিজের ভাষায় সুন্দর শব্দচয়নে লিখতে পারলে ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হয়। প্রত্যেকেরই নিজস্ব কৌশল আছে, নিজের কৌশল কার্যকর হলে সেটাই অনুসরণ করতে হবে।

নজর দিন ফোকাস রাইটিংয়ে
বাংলা ও ইংরেজিতে দুটি ফোকাস রাইটিং বা রচনা লিখতে আসে। ফোকাস রাইটিং বলতে বোঝায় সমসাময়িক কোনো একটি বিষয়ের ওপর ফোকাস করে ‘পয়েন্ট বাই পয়েন্ট’ সেটির উত্তর লেখা। দুটি ফোকাস রাইটিংয়ে মোট ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। ফোকাস রাইটিং লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ডাটা, চার্ট, কোটেশন ব্যবহার করলে ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হয়। যত পারেন তত ডাটা, গ্রাফ, কোটেশন ব্যবহার করুন। এগুলো আগে থেকে বিষয়ভিত্তিক নোট করে পড়তে পারলে ভালো হয়। ইংরেজির জন্য তিন পৃষ্ঠা এবং বাংলার জন্য চার পৃষ্ঠা লিখতে পারলেই যথেষ্ট। অতিরিক্ত লিখে খাতার পৃষ্ঠা বাড়ানোর চেয়ে পরিমিত গুছিয়ে লিখলে ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হয়। সুন্দর শব্দচয়ন গুরুত্বপূর্ণ। নীল অথবা সবুজ কালার কলম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাইলাইটস করা যেতে পারে। তবে এমন কলম ব্যবহার করা যাবে না, যা দিয়ে হাইলাইটস করলে পেছনের পৃষ্ঠায়ও দেখা যায়।
ফোকাস রাইটিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিকস হলো—করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রাখতে সরকারের ভূমিকা/বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কভিড-১৯-এর প্রভাব, এসডিজি, মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ, কপ-২৬, রোহিঙ্গা ইস্যু প্রভৃতি। এ ছাড়া অন্যান্য সাম্প্রতিক ইস্যু দেখে যেতে পারেন।

এগিয়ে থাকতে অনুবাদ
অন্য প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকতে অনুবাদে দক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেকোনো চাকরির লিখিত পরীক্ষার জন্য অনুবাদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। প্রায় সব চাকরির লিখিত পরীক্ষায় অনুবাদ এসে থাকে। অনুবাদে দক্ষ হওয়ার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করার বিকল্প নেই। অনুবাদের ভালো প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, অর্থনীতি পাতা ও আন্তর্জাতিক পাতার সংবাদগুলো দেখে অনুশীলন করা যেতে পারে। প্রতিদিন একটি প্যাসেজ হলেও অনুবাদ করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। নিয়মিত এই অভ্যাসটা করতে পারলে দারুণ কাজে দেবে। অনুবাদের প্রস্তুতির জন্য মহিউদ্দীনের লেখা ‘Translation for competitive Exams’ বইটি থেকে সর্বপ্রথম ব্যাংকের বিগত সালে আসা ট্রান্সলেশনগুলো অনুশীলন করা যেতে পারে। এরপর অন্যান্য পরীক্ষার অনুবাদ অনুশীলন করা যেতে পারে। পরীক্ষাকেন্দ্রে অনুবাদে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। যদি পরীক্ষাকেন্দ্রে এমন হয়, যে অনুবাদ আসছে তা আপনি পারছেন না, তবু চেষ্টা করে কাছাকাছি অর্থ হয় এমনভাবে লিখে আসুন। লিখিত পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

প্রতিবেদন বা দরখাস্ত লেখার নিয়ম শিখুন
ব্যবসায় সম্পর্কিত প্রতিবেদন বা দরখাস্ত লিখতে আসে। এই অংশে অনেকেই পরীক্ষার আগে অনুশীলন না করে যাওয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্রে সঠিক ফরম্যাট অনুযায়ী লিখতে পারেন না। অথচ একটু চেষ্টা করলেই এই অংশে নিশ্চিত নম্বর পাওয়া যায়। কেননা অন্যান্য অংশের চেয়ে এই অংশ তুলনামূলক সহজ। সহজ ভেবে হেলাফেলা করলে কঠিন হয়ে যায়। এর জন্য বিগত সালে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে আসা প্রতিবেদন বা দরখাস্ত দেখে অনুশীলন করুন। মূলত লেখার ফরম্যাট শেখাটা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েক ধরনের প্রতিবেদন বা দরখাস্ত লিখতে আসে। তাই সব ধরনের প্রতিবেদন বা দরখাস্ত লেখা অনুশীলন করুন। প্রতিবেদন বা দরখাস্ত এক পৃষ্ঠা লিখলেই যথেষ্ট।

টীকায় নম্বর পাওয়া সহজ
বর্তমান সময়ে ব্যাংকের চাকরির লিখিত পরীক্ষায় টীকা বা শর্ট নোটস লিখতে আসতে দেখা যায়। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর টীকা লিখতে আসে। সংক্ষিপ্ত আকারে এগুলোর উত্তর দিতে হয়। যেসব বিষয়ের ওপর টীকা লিখতে আসতে পারে তা হলো—মুজিববর্ষ, মেট্রো রেল, অনলাইন ব্যাংকিং, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, পদ্মা সেতু, খেলাপি ঋণ, অনলাইন ব্যাংকিং, রূপকল্প ২০৪১/ভিশন ২০৪১, সমুদ্র অর্থনীতি, অফশোর ব্যাংকিং, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রভৃতি।

গণিত নিয়মিত অনুশীলন
গণিতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সঠিকভাবে উত্তর করতে পারলে পুরো নম্বর পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা যায়, যা সাধারণত অন্য সাবজেক্টের ক্ষেত্রে তেমন হয় না। গণিতের প্রস্তুতির জন্য বাজারের প্রচলিত ভালো মানের এক বা একাধিক বই অনুসরণ করুন। গণিতে ভালো করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। বিগত সালে বিভিন্ন ব্যাংকে আসা প্রশ্নের গণিতগুলো চর্চা করুন। গণিতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখুন। এর চেয়ে বেশি সময় যেন না হয়। গণিতে অতিরিক্ত সময় দিলে অন্যান্য অংশ লেখার জন্য কম সময় পাওয়া যাবে। গণিতে ভালো দক্ষ না হলে সবার শেষে উত্তর করা ভালো। যাঁরা গণিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তাঁদের জন্য কথা হলো—গণিতের ৫০ শতাংশ প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ আসে। একটু মাথা খাটালেই পারা যায়। গণিত অপেক্ষাকৃত কম পেরে অন্যান্য অংশে খুব ভালো করেও অনেকে চাকরি পেয়েছেন।

Post a Comment

Use Comment Box ! Write your thinking about this post and share with audience.

Previous Next

نموذج الاتصال