পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলে কিছু আছে ? থাকলেও সেটা কোথায় ?

গোলাকার বস্তুর শেষপ্রান্ত বলে কিছু নেই। যেহেতু পৃখিবী গোল তাই প্রকৃতার্থে পৃথিবীরও শেষ প্রান্ত বলে কিছু নেই। কিন্তু এরপরও পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার ইয়ামাল পেনিনসুলা এলাকা। আবার পৃথিবীর শেষ মাথা হিসেবে পরিচিত নরওয়ের রোগাল্যান্ডের একটি পাহাড়ি পর্যটন এলাকা। রাশিয়ার ইয়ামাল পেনিনসুলা এলাকায় সৃষ্টি হওয়া রহস্যময় একটি গর্ত মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়ে আসছে। আর সে কারণেই রহস্যঘেরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত।

সম্প্রতি রাশিয়ার গবেষকরা দাবি করেছেন, ইয়ামালের গর্তটি এলিয়েন, গ্রহাণু, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত বা কোনো গ্যাস বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়নি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এই গর্ত সৃষ্টির জন্য দায়ী।
গর্তটির গভীরতা খুব বেশি নয়। এটি সর্বোচ্চ ৩০০ ফুট গভীর হতে পারে। এর নিচে বরফের হ্রদ রয়েছে। এই বরফ হ্রদে গর্তের গা বেয়ে পানির ধারা বয়ে চলেছে। গর্তটি সর্বোচ্চ ৩০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার পোলার সায়েন্টিস্ট ডক্টর ক্রিস ফগউইলের মতে, এই গর্ত তৈরি হয়েছে পিঙ্গোর কারণে।
পিঙ্গো হলো মেরু এবং এর কাছাকাছি অঞ্চলে পাওয়া এক ধরনের বরফের স্তূপ, যা মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকে। পিঙ্গোর আকৃতি বেশি বড় হলে এটা যদি গলে গিয়ে থাকে, তবে এই বিশাল গর্ত সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ববিদ ডেভিড উইলশের মতে, এটি রহস্যজনক একটি ঘটনা। মাটি নিচের দিকে ধসে গিয়ে তৈরি হওয়া এটা কোনো সাধারণ সিঙ্ক হোল নয়, আবার কোনো উল্কাপাতের ফলেও তৈরি নয়। গর্তের কিনার ঘিরে যে জঞ্জাল দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় মাটির নিচ থেকে কোনো ধরনের বিস্ফোরণে এটা তৈরি হয়েছে। অবশ্য এই অঞ্চলটি ভূকম্পনপ্রবণ এলাকা নয়। এটা পকেট আকারে সঞ্চিত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিস্ফোরণে তৈরি হতে পারে।

এই গর্তটির ৮০ শতাংশই বরফে তৈরি। ফলে এখানে বিস্ফোরণ ঘটার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে।
গর্তের রহস্য উদ্ধারে ইয়ামাল কর্তৃপক্ষ, রাশিয়ার সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব দ্য আর্কটিক ও ক্রায়োস্ফিয়ার ইনস্টিটিউট অব দ্য একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকেরা কাজ করেছেন। মাটি, পানি ও বাতাস থেকে নমুনা বিশ্লেষণ করে এই রহস্য সমাধান করতে তাঁরা চেষ্টা করছেন।

রাশিয়ার গবেষক আন্দ্রেই প্লেখানভ-এর মতে, এই অঞ্চলের তাপমাত্রায় পরিবর্তন আসার ফলে এ ঘটনা ঘটেছে। হঠাত্ সৃষ্ট এই গর্তটি বৃত্তাকার নয়, বরং এটি ডিম্বাকৃতির। প্লেখানভ মনে করেন, আট হাজার বছর আগে এটি সমুদ্র ছিল। পরে এখানে ভূপৃষ্ঠ তৈরি হয়েছে। আট হাজার বছর আগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে এখন। হয়ত আগামীতে অনন্য কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা দেখা যাবে এখানে।

Post a Comment

Use Comment Box ! Write your thinking about this post and share with audience.

Previous Next

نموذج الاتصال