যারা প্রথমবারের মত ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ

যারা প্রথমবারের মত ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের জন্য কিছু পরামর্শঃ


সরকারি ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার মূল শর্তই হল রিটেন পরীক্ষাটা ভাল দেওয়া। প্রিলি টেকা মোটামুটি সহজ, এর মার্ক যোগ হয় না। রিটেন ২০০ আর ভাইভা ২৫ মিলে মেধা তালিকা। ভাইভাতেও মোটামুটি কাছাকাছি মার্ক দেওয়া হয় বলে শোনা যায়। কাজেই মূলত রিটেন ভাল করা মানেই চাকরিটা প্রায় পেয়ে যাওয়া। ব্যাংক রিটেনের কোন সিলেবাস নাই, তবে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির করা আগের প্রশ্ন ঘাঁটলে দেখা যায়...
ম্যাথ থাকে কমবেশি ৫টা,
২টা বাংলা ইংরেজি অনুবাদ,
২টা ফোকাস রাইটিং,
চিঠি বা ফর্মাল লেটার বা বিজনেস লেটার,
একটা ইংরেজি প্যাসেজ থাকে তার উপর ৫টা ছোট প্রশ্ন,
দুই একবার সাথে সাম্প্রতিক ছোট প্রশ্নও আসছে।
বোঝাই যাচ্ছে ২ ঘণ্টায় আরাম করে সুন্দর মত গুছিয়ে লেখার মত পরীক্ষা এটা না।
শুরুতে ম্যাথের কথায় আসি, ব্যাংক ম্যাথ সাধারণত খুব কঠিন আসে না, বিশেষ করে যারা সাইন্সের তাদের জন্য, তবে কমার্স বা আর্টসের জন্য কিছুটা কঠিন বলা চলে। এজন্য প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে, বাজারে হাজার হাজার বই আছে, সেখান থেকে যেটা ভাল লাগে, সেখান থেকে আগের প্রশ্ন দেখে সলভ করতে হবে, এবং অবশ্যই হাতে কলমে খাতায় করতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ এইখানে পিছিয়ে যায়, চোখ বুলায়ে দেখে সোজা, কিন্তু পরে পরীক্ষায় একটু বড় ম্যাথ দিলে বা কম সময়ে অতিরিক্ত চাপের কারণে আর মিলাতে পারে না, ভুল করে বা করতেই পারে না। কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ম্যাথ আসে, কাজের, পাইপের, দূরত্ব ইত্যাদি। এগুলা বার বার প্র্যাকটিস করতে হবে।
এরপর অনুবাদ, এটা অল্প সময়ে শিখা কঠিন। যার ভাষাজ্ঞান ভাল, সে এমনিই পারবে, যার ভাল না তার জন্য বুদ্ধি, প্রতিদিন বাংলা আর ইংরেজি পেপার পড়া আর অবশ্যই আগের প্রশ্নে আসা অনুবাদ দেখা। অনুবাদ স্যার কখনো হুবহু শব্দ মিলায়ে দেখেনা তাই ভাবানুবাদ করতে হবে, আর পড়ে সুন্দর লাগতে হবে, কাঠখোট্টা শব্দ পরিহার করে শ্রুতিমধুর শব্দ ব্যবহার করতে হবে। বাজারে অনুবাদেরও অনেক বই আছে, যে পেপার কম পড়ে সে চাইলে সাম্প্রতিক এডিটোরিয়াল কিনতে পারে, কাজে দিবে। অনুবাদে অনেক ভাল মার্ক তোলা সম্ভব।
ফোকাস রাইটিং মার্ক কম বেশি হওয়ার একটা বড় জায়গা। সবার ধারণা ম্যাথ পারলেই জব নিশ্চিত, কিন্তু লেখার মান ভাল না হলে এই অংশে অনেক কম মার্ক উঠতে পারে। এখানে বিশেষ কিছু না লিখলে লাভ নাই, সাম্প্রতিক তথ্য বা কোটেশন ইত্যাদি দিয়ে মান বাড়াতে হবে। ভাষা সুন্দর হতে হবে এবং অবশ্যই কোন বানান এবং ব্যাকরণ ভুল করা যাবে না। ২/১টা ম্যাথ ভুল করেও ভাল ফোকাস রাইটিং লিখে জব পাওয়া সাধারণ ঘটনা।
চিঠি অল্প সময়ে লিখতে হবে, কারণ সময় খুব কম, এটার সবচে দরকারি অংশ হলো ফরম্যাট, ঠিক থাকলে ভাল নাম্বার আসবে, ফরম্যাট ভুল থাকলে অনেক কথা লিখেও লাভ নাই।
প্যাসেজ খুব দ্রুত পড়তে হবে, এজন্য আমার একটা বুদ্ধি হল, শুরুতে এক ঝলক নিচের প্রশ্নগুলো দেখা, এরপর সেই প্রশ্নের কিওয়ার্ড প্যাসেজে স্ক্যান করা। প্রশ্নগুলো বেশ সহজ থাকে, তবে প্যাসেজ থেকে হুবহু লিখলে মার্ক দিবে না। এটা অনেক সময় কমন পড়ে।
সাম্প্রতিক যদি আসে বা নাও আসে, নিয়মিত পেপার এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে হবে। এতে ফোকাস রাইটিং লিখতে সুবিধা হবে।
কিছু সাধারণ তথ্য দেই। অনেক সময় দেখা যায় প্রশ্ন একটু বেশি বড় বা বেশি কঠিন আসছে, বা বেশ কিছু জিনিস আনকমন। এই ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, মার্কও কম উঠবে, যতখানি পারা যায় ভাল দিতে হবে। যে কোন ভাবেই হোক ফুল আন্সার করার চেষ্টা করতে হবে। হাতের লেখা যার স্লো, তার লেখা প্র্যাকটিস করতে হবে, ২ ঘণ্টা ফুরুত করে শেষ হয়ে যায়, এক মুহূর্ত চিন্তা করার সময় পাওয়া যায় না, এক মুহূর্তও না। ম্যাথ ভুল করলে বা সব না পারলে বাকি অংশ দিয়ে কিছুটা হলেও পোষানোর চেষ্টা করতে হবে, কপালে থাকলে হবেই। ১ মার্ক বেশি পেলেই এগিয়ে যাবে অনেকের থেকে, সেটা যে অংশ থেকেই আসুক না কেন। ব্যাংক রিটেন কোন শান্তিমত দেওয়ার মত পরীক্ষা না, প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হবে। তবে শুধু ২টা ঘণ্টা নিজের সেরাটা দিলে কোন লবিং, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি ছাড়া একটা সরকারি প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়া সম্ভব। চাকরি করা যদিও কোন আনন্দের ব্যাপার না, তবে উপার্জন করা আনন্দের।
কোন বইয়ের কথা আলাদা করে বললাম না, যার যেখানে দুর্বলতা সে অনুযায়ী বই কিনে পড়তে হবে। বাজারে অনেক বই আছে, গাইড বইতে কম বেশি ভুল থাকবেই, তার মধ্যে যার যেটা পড়তে ভাল লাগে সে সেটা কিনে পড়বে। স্কুল কলেজের টেক্সট বই পড়তে হবে, কোন গাইড বই এর বিকল্প হতে পারে না৷ আর যে কোন বিষয়ে ইন্টারনেট এর ভাল ব্যবহার করতে হবে। ব্যাংক রিটেন ভাল দেওয়া কেন জরুরি শুরুতেই বলেছি, আরেকটা যোগ করব, ব্যাংকে প্যানেল হয়, অর্থাৎ ওয়েটিং লিস্ট থেকেও পরবর্তীতে চাকরি হয়, কাজেই রিটেন পাশ করে অন্তত ভাইভা দিয়ে রাখতে হবে। শুভ কামনা
 সবার জন্য।
মোঃ রাশেদুল সুহান
সিনিয়র অফিসার (আইটি), জনতা ব্যাংক লিমিটেড
সাবেক সিনিয়র অফিসার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
ইন্সট্রাক্টর (সুপারিশপ্রাপ্ত), ৩৮তম বিসিএস নন ক্যাডার


Post a Comment

Use Comment Box ! Write your thinking about this post and share with audience.

Previous Next

نموذج الاتصال