যেভাবে চাকরি পেলাম মো. আসিফ হোসেন, সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
যেভাবে চাকরি পেলাম
প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি একই সঙ্গে নিয়েছি
মো. আসিফ হোসেন, সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমে বিবিএ ও এমবিএ করেছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এমবিএ শেষ করার পর চাকরির প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা শুরু করি। তখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরি করি। এরপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে (বিআইজিএম) সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি করি। আমি বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার শুরুতেই পরীক্ষাপদ্ধতির বিস্তারিত জেনেছি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় (বহু নির্বাচনী, মোট ১০০ নম্বর) সাধারণত ৫টি বিষয়ের (ইংরেজি, বাংলা, ম্যাথ, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটার/আইসিটি) ওপর প্রশ্ন থাকে। প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই সংগ্রহ করি বিষয়ভিত্তিক বই। ব্যাংকের বিগত পরীক্ষাগুলোতে বেশি প্রশ্ন এসেছে—এমন টপিকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপর বেশি জোর দিই।
বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের পাশাপাশি বিসিএস প্রিলি ও ব্যাংকের প্রস্তুতি সহায়ক একটি বাংলা বই পড়েছি।
ইংরেজির ভোকাবুলারির জন্য আইবিএ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) পরীক্ষার প্রস্তুতির গাইড বইয়ের Verbal অংশ ও গ্রামারের জন্য Cliffs TOEFL বইটা কাজে দিয়েছে। ইংরেজি পত্রিকা পড়ার কারণে আমার ইংরেজি রিডিং হ্যাবিট তৈরি হয়েছে।
আইবিএর প্রস্তুতি গাইড থেকে ম্যাথ রিভিউ সেকশনটা অনুশীলন করেছি। গণিতের অনেকাংশের বেসিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে এটা বেশ কাজে দিয়েছে।
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) বইয়ের পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতিমূলক মাসিক পত্রিকা দেখেছি। দৈনিক পত্রিকা পড়াও বাদ যায়নি।
কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ের জন্য বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর ওপর ছিল বাড়তি গুরুত্ব। বেসিক মজবুত করতে গিয়ে এসএসসি ও এইচএসসির আইসিটি বইও দেখতে হয়েছে।
আইবিএ ভর্তি পরীক্ষার বিগত বছরের ইংরেজি ও গণিতের প্রশ্ন সমাধান করার ফলে প্রস্তুতির ভিত বেশ শক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর সমাধানও করেছি।
সেই সঙ্গে সহকারী পরিচালক/অফিসার (জেনারেল), অফিসার (ক্যাশ) ইত্যাদি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক দেখে অনুশীলনটাও জারি ছিল। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংকের প্রশ্নপত্রের সমাধানও করেছি রুটিনমাফিক।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ই সমন্বয় করে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিটাও এগিয়ে রেখেছি। লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত বাংলা ও ইংরেজিতে বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ের ওপর রচনা বা এ রকম কিছুর ওপর তুলনামূলক বেশি নম্বর বরাদ্দ থাকে। নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার কারণে পরীক্ষার খাতায় এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত ও কোটেশন দিতে পেরেছি। পত্রিকার এডিটরিয়াল অংশ বাংলা থেকে ইংরেজি আর ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার পাশাপাশি অজানা শব্দগুলো পত্রিকা থেকে নোট করতাম।
লিখিত পরীক্ষায় গণিত থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে। গণিতের প্রশ্নগুলো এমসিকিউ পরীক্ষার মতো হলেও এখানে সমাধানটি পুরোপুরি লিখিত আকারে দিতে হয়। এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একটি ম্যাথ কিভাবে সমাধান করতে হয়, সেটা বুঝে বুঝে লিখিত আকারেই করেছি। ফলে একই সঙ্গে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিও হয়ে গেছে। শুধু শর্টকাট নিয়মে ম্যাথ করলে লিখিত পরীক্ষার সময় আবার আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হতো। একবারেই বুঝে বুঝে করলে সব দিক থেকেই সুবিধা পাওয়া যায়।
আমাদের সময় পরীক্ষায় অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি থেকেও প্রশ্ন করা হয়েছে।
সামনের পরীক্ষাগুলোতেও এমন কিছু প্রশ্ন পেতে পারেন। এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, এমন কিছু কঠিন প্রশ্ন আছে, যা সবার জন্যই কঠিন। এখানে মাথা ঠাণ্ডা রেখে যে যতটা ভালো করতে পারে, সে ততটাই এগিয়ে থাকবে।
আমি এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে উপকৃত হয়েছি। কারণ এর ফলে সার্বিকভাবে ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। আমার হিসাবে প্রতিদিন নিয়ম করে ৫-৬ ঘণ্টা পড়লে এক বছরের মতো সময়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে।
শ্রুতলিখন : এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
সৌজন্য : কালের কণ্ঠ